ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সুপরিচিত কম্পিউটার কম্পোজ সেন্টার ‘অনন্যা কম্পিউটার্স’ এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মনিরুল ইসলাম মাশরেকী (মিনার) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গতকাল শনিবার বিকেল ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তিনি স্ত্রী-দুই ছেলে এবং ১০ ভাই-বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ভাই-বোনদের মধ্যে মিনার ৪র্থ। মিনারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরিচিত মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। এছাড়া মরহুমের নামাজে জানাজা আজ সকাল ১০টায় শহরের কাজীপাড়া সৈয়দ বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
অনন্য কম্পিউটার্স, শুধুই একটি প্রতিষ্ঠান ছিল না, শিক্ষার্থীদেরকে আগলে রাখত বড় ভাই-অভিভাবকের মতো। কোর্স শেষ না করে প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব কম।ডিজিটাল সেক্টরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এগিয়ে যাওয়ার গর্বিত অংশীদার অনন্যা কম্পিউটার্স ও এর পরিচালকবৃন্দ। ৯০ দশকের শুরু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কম্পিউটার কম্পোজের যাত্রাও শুরু প্রায় সেই থেকেই। হাতে গোনা ২/১টি কম্পিটার-কম্পোজ প্রতিষ্ঠানের ন্যায় শহরের রেলগেইট জেলা পরিষদ মার্কেটে যাত্রা করে ‘অনন্যা কম্পিউটার্স’। ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে মনিরুল ইসলাম মাশরেকী প্রতিষ্ঠা করেন এটি। এরপর ক্রমেই জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে এ প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার কম্পোজের সুনাম। নিজেরাই কম্পোজের পাশাপাশি এসএসসি/এইচএসসি পাশ করা ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রফেশনালি কম্পোজার হিসেবে গড়ে তুলেন। দশকের পর দশক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কম্পোজ সেক্টরের চাহিদা পূরণ করেছে অনন্যা কম্পিউটার্স। অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে শহরে দোকান খুলে কম্পোজ সেন্টার চালু করেছেন, কেউ বিদেশে গিয়ে কম্পিউটার অপারেটর পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন, কেউবা দেশেই সরকারি-বেসরকারিভাবে আজ কম্পিউটার পেশায় যুক্ত। অনন্যা কম্পিউটার্স এর পরিচালকদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, দায়িত্বশীলতা ও হৃদয় উজার করে প্রশিক্ষণ দান- আধুনিক কম্পিউটারের বিভিন্ন সবচেয়ে কঠিন কাজ- কম্পিউটার টাইপিং (কম্পোজ) খুব সহজভাবেই সেই ৯০ এর দশক থেকেই আয়ত্ব করতে পেরেছে শিক্ষার্থীরা। নিজ নিজ পেশায় সেই শিক্ষার্থীরাও আজ উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো অবস্থান করছে। যার পুরোটাই কৃতিত্ব এই অনন্যা কম্পিউটার্স ও এর পরিচালকদের।
কম্পিউটার শিক্ষক মনিরুল ইসলাম মাশরেকী (মিনার) এর শিক্ষার্থী, যাঁরা আজ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে কম্পিউটার পেশায় নিয়োজিত কিংবা পেশা বদল করেছেন, এই কৃতি ও গুণী শিক্ষক-অভিভাবকের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোকপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের বেদনার সাথে।