রবিবার, মার্চ ২৬, ২০২৩
হোমজেলাব্রাহ্মণবাড়িয়াআখাউড়া পৌর নির্বাচন, ‘প্লাস ফর্মুলায়’ উজ্জীবিত আ. লীগ ॥ ‘মাইনাসকান্ডে’ বিএনপি বিপাকে

আখাউড়া পৌর নির্বাচন, ‘প্লাস ফর্মুলায়’ উজ্জীবিত আ. লীগ ॥ ‘মাইনাসকান্ডে’ বিএনপি বিপাকে

মান-অভিমান করে থাকা নেতা-কর্মীরা ভিড়ছেন আওয়ামী লীগে। যে কারণে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও দলটি উজ্জীবিত। জয় নিশ্চিত করতে বাগে আনার চেষ্টা চলছে বিদ্রোহীদেরকেও। বাগে আনতে না পারলে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও চিন্তা করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র বিএনপিতে। দলে একক প্রার্থী। তবুও স্বস্থি নেই। ‘মাইনাসকান্ডে’ দলটিতে অস্বস্থিকর অবস্থা। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে পৌর বিএনপি’র কমিটি দিলে এতেই শুরু হয় অন্যরকম পরিস্থিতির। কমিটি দেয়ার ১১ দিনে পদত্যাগ করেছে ১১ জন। এ অবস্থায় অনেকেই দল বিমুখ হয়ে পড়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থীকে সহায়তা তো দূরের কথা দলের ঝড় সামলাতেই চিন্তায় নীতিনির্ধারকেরা।
এ অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই পৌরসভাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. তাকজিল খলিফা কাজল। বিদ্রোহী হিসেবে আছেন, সাবেক পৌর মেয়র মো. নূরুল হক ভূঁইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মোবারক হোসেন রতন, যুবলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম। বিএনপি থেকে একক প্রার্থী হলেন সাবেক সহ-সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন আব্দু। জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হয়েছে।
বিএনপি পৌর বিএনপি’র ঘোষণার ১১ দিন অর্থাৎ ১৩ থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ঘোষিত কমিটির ১১ নেতা। পদত্যাগকারি নেতারা হলেন, পৌর বিএনপির’র সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি মো. বাহার মিয়া, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান (কাউন্সিলর), সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. মন্তাজ মিয়া (কাউন্সিলর), সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক দুলাল ভুইয়া, সাবেক উপদেষ্টা মো. এলাই মিয়া, সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ মালদার, ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মশিউর রহমান বাবুল, সাবেক ৬নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক মো সহিদুল ইসলাম, আহবায়ক কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম রানা, সদস্য রহিজ খান। পদত্যাগপত্রে বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কমিটির আহবায়ক হিসেবে অন্য উপজেলার ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদককে নির্বাচিত করা। দলের কারো সঙ্গে পরিচিতি নেই এমন অনেক ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা, বিলুপ্ত কমিটির ১০১ জনের মধ্যে মাত্র সাতজনকে নতুন কমিটিতে স্থান দেয়ার বিষয়টি পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১৩ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেলিম ভূইয়াকে আহবায়ক ও আক্তার খানকে সদস্য সচিব করে আখাউড়া পৌর বিএনপির ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। গত ১৬ জানুয়ারি জিল্লুর রহমান নিজের ফেসবুকে আইডিতে এটি পোস্ট করেন।
নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম ভূইয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারি আব্দুর রহমান ওরফে সানির চাচাতো ভাই হলেন সেলিম ভূঁইয়া। মূলত সানির বড় ভাই বরিশল গ্রামের বাসিন্দা ও ভূইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির আহমেদের হাত ধরেই সেলিম ভূঁইয়া দলে প্রবেশ করেছেন বলে আলোচনা আছে।
এ বিষয়ে পদত্যাগ করা পৌর বিএনপি’র সদ্য সাবেক সভাপতি মো. বাহার মিয়া বলেন, ‘আমার মতো অনেক ত্যাগি নেতাকেই বর্তমান আহবায়ক কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্য উপজেলার লোককে আহবায়ক করা হয়েছে। আমরা তার নেতৃত্বে থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপি’র রাজনীতিকে ঘরে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এভাবে রাজনীতি করা সম্ভব না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদ্য সাবেক এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলের প্রার্থীর ভরাডুবি হবে। কেননা, কমিটি নিয়ে যে দ্বন্দ সৃষ্টি হয়েছে তাতে কেউ প্রার্থীর প্রতি কাজ করতে আগ্রহ দেখাবে না।’
আওয়ামী লীগ আধা যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতি থেকে দূরে উপজেলা আখাউড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ বোরহান উদ্দিন আহমেদ। দলটিতে তিনি এখন সদস্য হিসেবে আছেন। রবিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায় ওনার উপস্থিতি অনেককেই অবাক করে দেয়। সেই সঙ্গে বিষয়টিকে সাধুবাদ জানান অনেকে। এর আগে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক গাজী আব্দুল মতিন ও আরেক সাধারন সম্পাদক মো. মনির হোসেন বাবুল দলের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বাগে আনতে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে রবিবার দলীয় কার্যালয়ে সভা ডাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ। তবে ওই সভায় ডাকা হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী নূরুল হক ভূঁইয়া ও মোবারক হোসেন রতন আসেন নি। যে কারণে তাঁরা নির্বাচন করবেন বলে ধরে নিয়েই সভায় আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ওই দুইজনকে প্রত্যাহারের জন্য দলীয়ভাবে চিঠি দেয়া হবে। ওই চিঠি প্রাপ্তির পরও যদি তাঁরা প্রত্যাহার না করেন তাহলে দলীয় বিধি মোতাবেক বহিস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে সুপারিশ করা হবে।
যদিও বিদ্রোহী প্রার্থীরা খুব একটা মাথা ব্যথার কারণ হবে বলে মনে করছেন না দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। কেননা, আইনমন্ত্রীর আনিসুল হকের (স্থানীয় সংসদ সদস্য) বর্তমান আমলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করে, বেকারদের চাকরি দিয়ে ও ব্যক্তিগত ইমেজের কারণে দল মনোনীত প্রার্থী তাকজিল খলিফা কাজলের একটা গ্রহনযোগ্যতা এলাকাতে রয়েছে। এছাড়া দলীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা অনেকেই এখন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে বিষয়টিকে খুবই পজেটিভ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সভায় সভাপতিত্ব করা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য সবাইকেই আহবান জানানো হয়েছে। বিদ্রোহী হিসেবে থাকা দুইজন যদি সরে না দাঁড়ান তাহলে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments