শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
হোমজেলাকুমিল্লাআ’লীগ নেতা অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ আর নেই

আ’লীগ নেতা অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ আর নেই

আ’লীগ নেতা অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ আর নেই

প্রয়াত নেতার দ্বিতীয় জানাযায় হাজার হাজার মানুষের ঢল আর অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত করে ফুলে ফুলে ঢেকে দিয়েছেন নেতার কফিন।

কুমিল্লা প্রতিনিধি:

কুমিল্লায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক সিনেট সদস্য ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুবরণ করেন।

শুক্রবার বিকেলে নিজ গ্রাম দেবীদ্বার উপজেলার মোহাম্মদপুর পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত প্রয়াত নেতার দ্বিতীয় জানাযায় হাজার হাজার মানুষের ঢল আর অফুরন্ত ভালোবাসায় সিক্ত করে ফুলে ফুলে ঢেকে দিয়েছেন নেতার কফিন।
অধ্যক্ষ এম, হুমায়ুন মাহমুদের ভাই এজাজ মাহমুদ জানান, অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার ভাই করোনায় আক্রান্ত হন। প্রথমে তাকে বারডেম হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে সর্বশেষ পরীক্ষায় তার করোনা নেগেটিভ এলেও ফুসফুস ও কিডনিতে নানা জটিলতা দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১পুত্র সহ বহু রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এদিকে মরহুমের প্রথম জানাজা শুক্রবার সকাল ৯টায় ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন জামে মসজিদে (লেডিস ক্লাবের পাশে) পরে তাকে মোহাম্মদপুর নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এম হুমায়ুন মাহমুদের মৃত্যুতে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আ’লীগ চট্রগ্রাম বিভাগীয় সংগঠক শেখ ফজলুল হক সেলিম, ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য র,আ,ম ওবায়দুল মোক্তাদির চৌধূরী, কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, একই আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী এ,বিএম গোলাম মোস্তফা, সাবেক শিল্প মন্ত্রী দিলিপ বড়–য়া, সাবেক এমপি ও উপমন্ত্রী, আ’লীগ কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এ,এফ,এম ফখরুল ইসলাম মূন্সী, আ’লীগ কুমিল্লা জেলা সাবেক সাধারন সম্পাদক আফজল খান। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা সভাপতি এ,বি,এম আতিকুর রহমান বাশার, সাধারন সম্পাদক কমরেড পরেশ কর, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টর, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগৈ সাবেক সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার, ন্যাপ নেতা ও বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাকুর রহমান ফুল মিয়া, ন্যাপ কুমিল্লা উত্তর জেলা সভাপতি সফিকুল ইসলাম সিকদার, দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ জয়নুল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাস্টার, ন্যাপ উপজেলা সভাপতি অনিল ঠাকুর ও সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান বুলবুল, সিপিবি দেবীদ্বার উপজেলা সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ও সাধারন সম্পাদক সৈয়দ খলিলুর রহমান বাবুল আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ¦ হুমায়ুন কবির, কুমিল্লা জেলা যুব ইউনিয়ন সভাপতি একেএম মিজানুর রহমান কাউছার গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
জানাযার পূর্বে প্রয়াত নেতার স্মৃতিচারণ করেন, কুমিল্লা-৪ দেবীদ্বার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার, কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টর, দেবীদ্বার উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ জয়নুল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাস্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক এ,কে,এম সফিকুল আলম কামাল, সদস্য ও ঢাকা গ্রæপের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সদস্য লুৎফর রহমান বাবুল, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পার্থ সারথি দত্ত, দেবীদ্বার পৌর আ’লীগ সভাপতি আবুল কাসেম চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম সরকার, যুবলীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা আহবায়ক বাহাউদ্দিন বাহার, ছাত্রলীগ দেবীদ্বার উপজেলা আহবায়ক মো. ইকবাল হোসেন রুবেল প্রমূখ। জানাযায় ইমামতি করেন, নাগাইশের গদীনিশীন পীর সাহেব মাওলানা মোস্তাক ফয়াজী।
আলোচকরা বলেন, তিনি একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ছিলেন। দেবীদ্বার ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগকে সু-সংগঠিত করতে এবং বিভিন্ন অ্গং সংগঠনগুলো সচল করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। আপাদমস্তক ছিল আওয়ামী রাজনৈতিমনা হুমায়ুন মাহমুদ এর জীবন।
১৯৬৯সালের গণআন্দোলনের সময় কুমিল্লা জিলা স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তার আরেক বন্ধু তৎকালীন ছাত্রনেতা একসময়ের বিএনপির নেতা ব্যারিষ্টার আল মামুন আহ্বায়ক, হুমায়ুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে জিলা স্কুল থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনীতির হাতেখড়ি। তার ছাত্র রাজনীতির দুই অবিভাবক নাজমুল হাছান পাখি ও এডভোকেট রুস্তম আলীর নেতৃত্বে ছাত্র লীগে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনতে নাজমুল হাছান পাখি, রুস্তম আলীর নেতৃত্বে বাবার অবাধ্য হয়েই চলে যান আন্দোলনে। রেইসকোর্স ময়দান হতে ফিরে এসে, যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন কুমিল্লা জেলা ছাত্র লীগের নেতাদের সাথে। তৎকালীন ডিসি শামছুল হক সাহেবের বাংলোর পাশে জেসিসির ডেমি রায়ফেল দিয়ে ট্রেনিং শুরু করেন। সেখানে ট্রেনিং নেন তার দুই ছাত্র লীগের নেতার কাছে হুমায়ুন মাহমুদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পিতা- মাতার সাথে কুমিল্লা শহর হতে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। সেখান থেকে চলে যান নানার বাড়ি পোনরা শেখ বাড়িতে। নানা শেখ আঃ জব্বার ছিলেন দেবীদ্বার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। নানার বাড়িতে মামাত ভাই শেখ আঃ আউয়াল, শেখ সফিউল্লাহ, আরো খালাতো ভাইদের নিয় শরনার্থী শিবির খুলে মুক্তির আন্দোলনের ভুমিকা রাখে হুমায়ুন মাহমুদ। যার পরোক্ষ স্বাক্ষী ন্যাপ গেরিলা যোদ্ধা মোকুর রহমান ফুলমিয়া মাষ্টার। ১৯৭২সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্র লীগের প্যানেল থেকে এজিএস পদে নির্বাচন করেন। পুরো প্যানেল হেরে যায় জাসদ ছাত্র লীগের নিকট। কুমিল্লা জেলা ছাত্র লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি বরুড়ার সাবেক এম পি নুরুল ইসলাম মিলন এবং তার পরবর্তী ছাত্র লীগের সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, খ ম জাহাঙ্গীর, ওবায়দুল কাদের, বাহালুল মজনু চুন্নুদের সান্নিধ্যে ছাত্র লীগের রাজনীতি করে। ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য হন ও সিনেটর সদস্য হন। পরবর্তিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নির্বাচিত হন।
একটা সময়ে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে জননেতা আঃ আজিজ খান সাহেব সহ তৎকালীন দেবীদ্বার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ হুমায়ুন মাহমুদকে দেবীদ্বার আওয়ামী লীগের হাল ধরতে বলেন। কুমিল্লা জেলা আ’লীগের সভাপতি সাবেক এম,এন,এ আঃ আজিজ খান সাহেবের মৃত্যুর পর ততকালীন আওয়ামী লীগের নেতাদের অনুরোধে দেবীদ্বার আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। নেত্রীর নির্দেশে তৎকালিন কুমিল্লা জেলা আওয়ামিলীগ অধ্যক্ষ হুমায়ুন মাহমুদকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেন। সেই থেকে দেবীদ্বার আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে পথ চলা শুরু। আঃ মতিন মুন্সি, এডভোকেট জানে আলম, মতিন সরকার, লতিফ সরকার, এডভোকেট নিজামুল হক, আমিন আহাম্মদ মন্টু, মনিরুজ্জামান মাষ্টার, অধ্যক্ষ আঃ জলিল ভূইয়া,জয়নুল আবেদিন মাষ্টার, আলহাজ্ব জয়নুল আবেদীন, শেখ আঃ আউয়াল ,আঃ আলিম, ছিদ্দিকুর রহমান ভূইয়া, আনোয়ার হোসেন খোকন, বাহাউদ্দিন বাহার, লুতফুর রহমান বাবুল, জলিল চৌধুরী, ভিপি কামাল সহ আরো কিছু নেতাদের নিয়ে প্রথমে ছাত্র লীগের পুনর্গঠনে হাত দেন উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন, সেই সময় দেবীদ্বারের রাজনীতি ছিল কলেজ ছাত্র সংসদকে ঘিরে। খলিল- কবির পরিষদ, কামাল- মোর্শেদ- নাঈম পরিষদ, কামাল- মজনু- মফিজ পরিষদ, মনির- হেলাল- মান্নান পরিষদ, ফয়েজ- সেলিম- খোকন পরিষদ, সেলিম- মফিজ- মাইনুল পরিষদ, মজিব- নিশাদ- বাবুল পরিষদ সহ সব কটা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হুমায়ুন মাহমুদের শ্রম- অর্থ- পরমর্শ ও দিক নির্দেশনা ছিল নিবেদীত। মেঘ- বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘুরেঘুরে ভোট চেয়েছে ছাত্র লীগের প্যানেলের জন্য। অসংখ্য কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের নেতাদের দেবীদ্বারে এনেছে ছাত্র লীগকে সু-সংগঠিত করতে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ততকালিন আওয়ামী লীগের নেতাদের ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেন। অনেক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের দেবীদ্বারে এনেছে আওয়ামী লীগ শক্তিশালি করতে। পরবর্তীতে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামমীলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম তিনি। স্ত্রী, ১ পুত্র সন্তান ব্যাবসা বানিজ্য সব ফেলে সারাক্ষণ আওয়ামী লীগ নিয়ে ব্যাস্ত থেকেছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments