- নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার এক বায়িং হাউজের প্রতারকের খপ্পড়ে পড়ে সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন ঠিকাদার সাব্বির আহম্মেদ। সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে নিদারুন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে সাব্বির ও তার পরিবার। সাব্বির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল গ্রামের মোঃ নুরুল হুদার ছেলে। তিনি অরুয়াইলের মেসার্স সোনার তরী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সিলেট থেকে সিলেকশন বালু, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করে ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্প/প্রজেক্ট সরবরাহ করতেন। অন্যদিকে প্রতারক শাহাদাৎ মোহাম্মদ ইউসুফ রনি ঢাকাস্থ জয় বায়িং সলিউশন লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। রনির বাড়ি কক্সবাজার জেলার লোহাগড়া উপজেলার বড় পুকুরিয়া গ্রামে। রনি ঠিকাদার সাব্বিরকে প্রলোভন দেখিয়ে অর্ডার দিয়ে সাব্বিরের প্রতিষ্ঠান থেকে দফায় দফায় প্রায় ৬৩ লাখ টাকার সিলেকশন বালি সহ ৬৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ বিষয়ে শাহাদাতের বিরুদ্ধে ঠিকাদার সাব্বির ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে শাহাদাৎ মোহাম্মদ ইউসুফ রনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে আটক আছেন। এছাড়া রনির বিরুদ্ধে ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুনামগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলায়ও রনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে বলে জানা গেছে।
আদালতে দাখিলকৃত মামলা, পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন ও ব্যবসায়িক কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলাকালে বিবাদী শাহাদাৎ মোহাম্মদ ইউসুফ রনি’র সাথে পরিচয় হয় এবং রনি’র অর্ডারমতে বাদী সাব্বির সিলেকশন বালু নৌকাযোগে চাহিদামত স্থানে পৌঁছে দেন। এক পর্যায়ে রনি ঠিকাদার সাব্বিরকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কক্সবাজারের বাঁশখালীস্থ সেপকো-৩ কোম্পানীর ওয়ার্ক অর্ডার পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখান এবং তাকে ওয়ার্ক অর্ডার না দিয়ে প্রথমত বিবাদীর নামে ওই কোম্পানীতে সিলেকশন বালু চালান দেয়ার জন্য অর্ডার দেন। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে বালু সরবরাহের চুক্তি হয়। বাদীর নামে ওয়ার্ক অর্ডার ইস্যুর জন্য ধারাবাহিকভাবে গত ০৬.১১.২০১৯ইং তারিখ থেকে গত ০৫.০১.২০ইং পর্যন্ত নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা বিবাদী রনি হাতিয়ে নেন। এরপর চুক্তিমতে ঠিকাদার সাব্বির ৯০ হাজার ১শ’ ১৯ ঘনফুট সিলেকশন বালু সরবরাহ করেন। যার মূল্য দাঁড়ায়- ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ২শ’ ৭০ টাকা। এরপর বিবাদী ঠিকাদারের কাছ থেকে সার্টিফিকেট ইস্যুসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরির জন্য আরও নগদে ও বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ৪০ হাজার ২শ’ টাকা গ্রহণ করেন। রনির অর্ডারমতে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করতে গিয়ে সাব্বির নিজের সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করেছিলেন। পরবর্তীতে বাদীর সরবরাহকৃত বালুর বিল উত্তোলনের জন্য বিবাদী রনি নিজের অফিসিয়াল প্যাডে নিজের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে ইনভয়েস জমা দিয়ে বিল উত্তোলন করে বাদীকে পরিশোধ না করে পুরো টাকা আত্মসাত করেন। বাদী বিলের জন্য রনির সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও রনি বিল পরিশোধ না করে বাদীর কাছ থেকে নেওয়া সিলেকশন বালুর মূল্যসহ নগদে, ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে নেওয়া প্রায় ৬৬ লাখ ৩০ হাজার ৪শ’ ৭০ টাকা আত্মসাত করেন। পরে সাব্বির ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে পেনাল কোডের ৪০৬/৪২০ ধারায় মামলার আবেদন জমা দিলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে (নং- সিআর ২৫০/২১(সরাইল) সরাইল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে সরাইল থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ শেহাবুর রহমান ঘটনার সত্যতা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর রনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে হাজিরা দিতে এলে বিজ্ঞ আদালত জামিন নামঞ্জুর করে রনিকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয় বায়িং সলিউশন লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাৎ মোহাম্মদ ইউসুফ রনির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও ১৮৮১ এর নিগোশিয়েবল এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারায় একটি মামলা চলমান। যার নং- সিআর ০২/২০২১(ছাতক)। এ মামলার বাদী সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার কাটাশলা গ্রামের মোহাম্মদ আশরাফ রব্বানী। পেশায় ঠিকাদার রব্বানীর কাছ থেকেও একইভাবে নির্মাণসামগ্রী সংগ্রহ করে বিল পরিশোধ না করে ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাত করেছিলেন শাহাদাৎ মোহাম্মদ ইউসুফ রনি। এই মামলায় রনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
এই অবস্থায় শাহাদাত হোসেন রনির জামিন নিয়ে শঙ্কায় আছেন বাদী মোঃ সাব্বির আহম্মেদ। জামিন পেলে ফেরারী হয়ে আত্মগোপনে চলে গেলে তাকে আর পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন-‘শাহাদাতের অর্ডার কমপ্লিট করতে গিয়ে আমার জমি-জমা বিক্রি করতে হয়েছে। এখন পুরো বিল আত্মসাত করায় পরিবার নিয়ে আমি খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।’ শাহাদাতের বিরুদ্ধে আরও অনেক ঠিকাদারের অভিযোগ রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।