@নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন শূন্য ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ। এরই মধ্যে অনেকেই গণসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘ ৫০ বছরেও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী বিজয়ী না হওয়ায় সামনের নির্বাচনকে ঘিরে বিজয়ের ছক কষছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আসন শূন্য ঘোষণা পর থেকেই প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এছাড়া জোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও তৎপর রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে পর দীর্ঘ ৫০ বছরের ইতিহসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। শুধু তাই নয়, সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখন ২০১৮ সালের জোটের গ্যাড়াকলে জাতীয় পাটির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী দেয়নি। তবে এবার উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাতছাড়া (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটিতে তারা দলীয় প্রার্থী চান কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আকাঙ্খাও এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকেই কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তাই এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলাসহ জেলার নেতারা।
এর মধ্যে সরাইল উপজেলা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়ার সন্তান অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহমেদ কাউছার, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদের হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু অন্যতম।
১৯৭৩ সালে পর দীর্ঘ ৫০ বছরের ইতিহসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়নি। শুধু তাই নয়, সারাদেশে যখন আওয়ামী লীগের জোয়ার তখন ২০১৮ সালের জোটের গ্যাড়াকলে জাতীয় পাটির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী দেয়নি। তবে এবার উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাতছাড়া (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনটিতে তারা দলীয় প্রার্থী চান কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য।
আশগঞ্জ উপজেলা থেকে সম্ভাব্যপ্রার্থী তালিকায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছফিউল্লাহ মিয়া, গত জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মঈনউদ্দিন মঈন, বেসরকারি শিক্ষাক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, সাবেক ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশ আইন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান আনসারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান রতন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান।
এদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন— এ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে বহিষ্কৃত) অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে এবার ‘ইতিহাস’ বদলানোর সুযোগ আওয়ামী লীগের। এমনিতেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের টানাপোড়েন। গত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ মহাজোট গঠন করার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এ আসনে জয় লাভ করেন। তবে সেই থেকে এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী এ আসনে বিজয় হতে পারেননি। পরে গত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সাত্তার ভূইয়ার জয় লাভ করেছিলেন। সে সময় নির্বাচনে লড়াই করে জেলা জাতীয় পার্টিও সাবেক আহবায়ক জিয়াউল হক মৃধা ও তার জামাতা জাতীয় পার্টিও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। সেই নির্বাচনে আব্দুস সাত্তার ভূইয়ার সাথে শ্বশুড় ও জামাতা দুজনই ভোটের দৌঁড়ে পরাজয় হয়েছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন, এটি মহাজোটের আসন। মহাজোটের প্রধান নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার নেত্রী রওশন এরশাদ যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই চূড়ান্ত। আমি সবসময় মানুষের পাশে রয়েছি, পাশে থেকে কাজ করেছি। নির্বাচন করার মতো যাবতীয় প্রস্তুতি আমার ও আমার দলের রয়েছে। ১০ বছর আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যে উন্নয়ন করেছি, বিগত সময়ে কেউ সেটি করতে পারেনি।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন জানান, ৭৩ এর পর এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ কোনো এমপি পায়নি। তাই উন্নয়নবঞ্চিত এ আসনটিতে আমরা আওয়ামী লীগ থেকে এমপি চাই। নির্বাচনে আমিও একজন প্রার্থী। নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরে আমি মাঠে রয়েছি।
এ আসনে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈনউদ্দিন মঈন বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি না থাকায় এ আসনটি উন্নয়নবঞ্চিত। তাই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। আমি একজন প্রার্থী এবং বিগত নির্বাচনের পর থেকেই আমি মাঠে রয়েছি।
এদিকে, এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অপর সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহমেদ কাউছার বলেন, আমার বাবা অ্যাডভোকেট সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। বাবার সঙ্গে আমার চাচা সৈয়দ আফজল হোসেনও শহীদ হন। শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমার বাবার নাম গেজেটভুক্ত। শিশু বয়সে আমি ও আমার বোনেরা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমার ছোট বোনটি বাবার শহীদ হওয়ার দুমাস পর জন্মগ্রহণ করেছে। জন্মের পর সে বাবার মুখ দেখেনি। বাবার অবর্তমানে চরম বৈরী পরিবেশে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বড় হয়েছি। বাবা চাচার আত্মত্যাগের বিনিময়ে দলের কাছে কোনো আনুকূল্য চাইনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দল মূল্যায়ন করবে আশা করি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বলেন, ‘একাধিকবার জাতীয় পার্টির এম.পি ওই আসন থেকে পাস করার পর সেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। কিন্তু সর্বশেষ নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জামানত হারায়। ওই সময়ে বিএনপি প্রার্থী পাস করাসহ আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাস না করায় সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা একেবারেই উন্নয়ন বঞ্চিত। উন্নয়নের কারণে আমরা চাই এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসুক। সেখানকার স্থানীয় সম্মেলনেও আমি কথাটা বলেছি। তবে যদি কেন্দ্রীয়ভাবে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে ভিন্ন বিষয়।’
প্রসঙ্গত, গত ১১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার পদত্যাগ করার পর নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে। এরপর থেকেই নির্বাচনী আমেজে ভাসছে সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা।