@নিজস্ব প্রতিবেদক:
আশুগঞ্জ সমন্বিত বিকাশ কেন্দ্র আয়োজিত বিজয় মেলা জামায়াত-বিএনপি’র সরকার বিরোধী বক্তব্যের মঞ্চে পরিনত হওয়ায় প্রশাসন মেলা বন্ধ করে দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলার প্যান্ডেল-মঞ্চ খোলার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশের সরাইল-আশুগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে মেলার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আশুগঞ্জ ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিজয় দিবসে ১৬ই ডিসেম্বর ১০ দিন ব্যাপী এই মেলা শুরু হয় স্থানীয় শ্রম কল্যান কেন্দ্রের মাঠে। স্থানীয় সমন্বিত বিকাশ কেন্দ্র এই মেলার আয়োজক। এর আগের বছরগুলো সংগঠনটি মেলার আয়োজন করলেও এবারই এটিকে জামায়াত-শিবিরের বক্তব্যের মঞ্চে পরিনত করা হয়। স্থানীয় চিহ্নিত অপরাধীরাও মেলায় পারফর্ম করে। মেলার বিভিন্ন দিনের অতিথি তালিকা প্রকাশের পর এনিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জেলা পুলিশ অতিথি নিয়ে আপত্তি করে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করেননি আয়োজকরা।
মেলার ৬ষ্ঠ দিনের আলোচনায় জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত গনমাধ্যমগুলোর ঢাকায় কর্মরত
সাংবাদিকদের অতিথি করা হয়। স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জামায়াতের পত্রিকা নয়াদিগন্তের আশুগঞ্জ প্রতিনিধি মো: মোজাম্মেল হক এবং সাধারণ সম্পাদক বন্ধ হয়ে যাওয়া বিএনপি’র আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু তাদের বক্তব্যে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উদ্যতপূর্ন বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে ভিডিও ভাইরাল হয়। স্থানীয়রা জানান,
সমন্বিত সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র নামীয় ওই সংগঠনটির সভাপতি মো: শরীফুল ইসলাম মিলন এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ লিটন স্থানীয় প্রেসক্লাবের
জামায়াত-বিএনপি আদর্শের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলোচনা করে অতিথি ঠিক করে।
তাছাড়া ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ মেলার ৭ম দিনে
অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর বিএনপি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট বরকত উল্লাহ বুলু,পদত্যাগী সংসদ সদসৌ রুমিন ফারহানা,জেলা বিএনপি’র আহবায়ক জিল্লুর রহমানসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নিমন্ত্রন করা হয়। তবে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্যদানকারী স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল ও সাধারণ সম্পাদক সাচ্চুর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাতেই জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুজন দত্ত তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে একটি পোষ্ট দেন। এতে তিনি বলেন- ‘আশুগঞ্জ প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু
আপনার বক্তৃতার প্রতিটা লাইন এবং বক্তৃতায় আপনার শব্দ চয়ন মনোযোগ সহকারে শুনলাম। সাগর-রুনি হত্যাকান্ড, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বিএনপির সভা-সমাবেশ দিয়ে শুরু করে আওয়ামী লীগের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করা পর্যন্ত কোন কিছু বাদ রাখেননি। আপনি একজন গণমাধ্যমকর্মী হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতো যে বক্তব্য রেখেছেন। যদি ধরেও নিই, আপনি একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে বক্তব্য রেখেছেন, সেখানেও তো কেউ আপনাকে বাধা দেয়নি। তাহলে রাজনৈতিক দলের নেতা/কর্মী হিসেবে আপনার কথা বলার স্বাধীনতাটা বন্ধ হলো কোথায়? একদিকে সরকার ও আওয়ামী লীগের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করবেন, আবার বলবেন কথা বলার স্বাধীনতা নেই। কথা বলার স্বাধীনতা আছে বলেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মতো অনুষ্ঠানে এমন যা-তা বক্তব্য দিতে পেরেছেন। স্বাধীনতা আছে বলেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ২২ ডিসেম্বর বিজয় মেলায় অতিথি করেছেন। আমরা কিন্তু অতীতে কথা বলার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সমাবেশ- সহাবস্থান দেখেছি। আর কি স্বাধীনতা চান? তাহলে তো স্বাধীনতার ব্যাখ্যাটাই পাল্টে দিতে হবে। এর চেয়ে স্বাধীনতার চরম সীমা আর কোথায় পাবেন? তবে স্বাধীনতারও কিন্তু একটা সীমারেখা আছে।’ সুজন দত্ত বলেন-আমরা চাই তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা।
বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারী কল্যান ট্রাষ্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন-খুবই দুঃখজনক। আমাদের গড়া বিকাশ কেন্দ্র এখন রাজাকারদের ঘাটিতে পরিণত হয়েছে। আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের আহমেদ বলেন- আমি বিষয়টি শুনেছি। এব্যাপারে আমরা সবাই কথা বলে ব্যবস্থা নেব। এদিকে মেলায় উচ্চস্বরে অশ্লীল-বেসুরের
গান বাজিয়ে এলাকার মানুষের জীবন উষ্ঠাগত করা হয়। তাছাড়া এই ক’দিন মেলায় আগত অনেক নারী শ্লীলতাহানির শিকার হয়।