ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভূমিদস্যুদের দৌড়াত্ম ক্রমশ বেড়েই চলেছে। খতিয়ানে পুকুর থাকলেও দলিলে ভরাট পুকুর দেখিয়েই জ্যান্ত পুকুর ভরাট করে নিচ্ছে একদল ভূমিখেকো ভূমিদস্যু।
এক সময়ের পুকুরের শহরে আজ পুকুর শূন্য হতে চলেছে। পুকুর ভরাট সব জায়গায় বিরাজ করলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যেন মদ্যপানের মত বেশি উন্মাদে নেমেছে তারা।
সবমিলিয়ে দেখা যায় পৌর শহরের পাইকপাড়াস্থ পুরাতন কুমিল্লা সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে রাম ঠাকুর মন্দিরের ৮১ শতাংশের পুকুরটি এখন ভূমিখেকোদের দখলে। পুকুরটির পশ্চিমাংশের পুরোটাই অট্টালিকা নির্মাণ করে দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। পুকুরের ২৫ শতাংশ রাম ঠাকুর মন্দিরের এবং অবশিষ্ট ৫৬ শতাংশ ব্যক্তিমালিকানা। পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হলেও ভূমিখেকোরা আইনের তোয়াক্কা না করেই পুকুরের অংশ দলিলে ভরাট পুকুর দেখিয়ে বেচা কেনা করছে। যদিও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা বিশল চক্রবর্তীও এই পুকুরে তার শৈশবের দুরন্তপনা পাড় করেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা শাখার সভাপতি ও পাইকপাড়া নিবাসী নিতীশ রঞ্জন রায় জানান, আমার সচোক্ষে দেখা পূর্ব পাইকপাড়ায় একসময় কুমিল্লা সিলেট মহাসড়কের পাশে গুরমা পুকুরটিতে আমরা গোসল করতাম, সাঁতার কাটতাম। এখন এখানে দোকানপার্ট হয়ে গেছে। রাম ঠাকুর মন্দিরে যাওয়ার রাস্তাটি পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিমাংশের অংশগুলো এখন দখলের চক্রান্ত চলছে। এ পুকুর থেকে রাম ঠাকুর আশ্রমের গঙ্গা জলের জন্য আহবান করা হতো। তারা প্রভাবশালী সিন্ডিকেট হওয়ায় পুকুরটি এখন তাদের দখলে রয়েছে। পুকুর উদ্ধারে প্রশাসন কিছুদিন তৎপর থাকলেও অজানা কারণে নিশ্চুপ হয়ে যায় বলে তিনি জানান। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী করে তিনি বলেন গগন শাহ পুকুর, রাম কানাই হাই একাডেমি স্কুল পুকুরসহ শহরের হারিয়ে যাওয়া পুকুরগুলো পুনরুদ্ধারে তৎপর হওয়ার জন্য।
ইমারত নির্মাণকৃত দুলাল মিয়া ২ শতক ৮২ পয়েন্ট দলিলে ভরাট পুকুর জেনেও ক্রয় করে অট্টালিকার কাজ করছেন।
দুলাল মিয়া জানান, আমি এই জায়গা বাবুল মিয়া থেকে ২০১৭ সনে ক্রয় করেছি। দলিলে জায়গাটি ভরাটকৃত পুকুর উল্লেখ দেখেই ক্রয় করেছি। তখন এখানে দোতলা বাড়ি ছিল। আমি দোতলা বাড়ি ভেঙ্গে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য কাজ ধরেছি। শুধু দলিলে ভরাটকৃত পুকুর দেখে আর খতিয়ান না দেখেই জায়গা কিভাবে কিনলেন এমন প্রশ্নে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। যেহেতু বিএস, সিএস ও আরএস খতিয়ান অনুযায়ী আপনার ক্রয় করা জায়গাসহ এখনো পুকুরই রয়েছে সেহেতু পুকুর ভরাট বা জলাশয় ভরাটে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন, আপনি কি কোন ছাড়পত্র নিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার বাড়ির পাশেই পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তার বাড়ি। তার সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়, তিনি আমাকে কখনো বলেনি ছাড়পত্রের কথা। পৌরসভার ভিতরে বহুতল ভবন নির্মাণে পৌরসভার অনুমোদন আছে কি না তখন উনি বলেন পৌরসভার অনুমোদন কাগজ নেই কিন্তু জমা দিয়ে রেখেছি। দুলাল মিয়া ছাড়াও আর ও ব্যক্তি মালিকানার অংশীদারগণ অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন।
নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সভাপতি মো. শামীম আহমেদ এর সাথে হলে তিনি জানান, পুকুর মন্দিরের হোক বা ব্যক্তিমালিকানা হোক অথবা সরকারি হোক পুকুর তো পুকুরই থাকবে। জলাশয় আইনে ভরাটের কোন সুযোগ নেই। এখানে যে বিষয়টা লক্ষণীয় প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেই শহরে প্রভাবশালী ভূমিখেকোরা পুকুর ভরাটের মতো জঘন্যতম কাজটি করে যাচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় শহরে পুকুর ভরাটের ঘটনা ঘটেছে এবং কর্তৃপক্ষকে কিছু আইনী পদক্ষেপ নিতেও দেখা গেছে। দুঃখের বিষয় হলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে শেষ পর্যন্ত সুবিধা কিন্তু ভূমিখেকোরাই পেয়েছে এবং তারা ধরেই নিয়েছে জলাশয় আইন-কানুন বলে কিছু নেই একবার ভরাট করতে পারলেই হয়ে গেলো। আমরা আশা করবো এই আইনী লুকোচুরি খেলা থেকে বেড়িয়ে এসে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে ৮১ শতাংশ জায়গাই পুকুর। ব্যক্তিমালিকানাও রয়েছে এবং রাম ঠাকুর মন্দিরেরও অংশ রয়েছে। কোন ভিটিবাড়ির উল্লেখ নাই বলে তিনি জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুল আমীন জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তারই প্রেক্ষিতে সেখানে আমাদের লোক পাঠিয়ে সত্যতা পেয়ে ইমারতের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি এবং তাদেরকে বলেছি লকডাউনের পর অফিস খোলার পর আমাদের অফিসে যোগাযোগ করা জন্য বলা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।