মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
হোমজেলাশোকে মাতম চম্পকনগরের জনপথ: মেডিকেল শিক্ষার্থীর জানাযা সম্পন্ন 

শোকে মাতম চম্পকনগরের জনপথ: মেডিকেল শিক্ষার্থীর জানাযা সম্পন্ন 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত শুক্রবার নৌ-দূর্ঘটনায় অকালে ঝড়ে যাওয়া রাজধানীর গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া চম্পকনগরের আরিফ বিল্লাহ মামুন বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের আশাভরসা একমাত্র মেধাবী ছেলেটির অকালে ঝড়ে যাওয়া যেন কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনেরা।গতকাল রোববার সকালে আরিফ বিল্লাহ মামুন এর নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে একই ইউনিয়নের গেরারগাঁও গ্রামের একই পরিবারের চার সদস্যকে হারিয়ে নির্বাক পরিবারের সদস্যরা। তারা নৌ- দূর্ঘটনার জন্যদায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী জানান।
সকালে মেডিকেল শিক্ষার্থী আরিফ বিল্লাহ মামুনের বাড়ীতে গিয়ে দেখাযায় শতশত মানুষের ভীর। একটি ফ্রিজিং এ্যাম্বুলেন্সে রাখা আছে। মেডিকেল শিক্ষার্থী মামুনের লাশ। স্বজন বন্ধু বান্ধব সকলে শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। কেউ কেউ বুকফাটা কান্না ধরে না রাখতে পেরে ফুফিয়ে কাঁদছেন। ফ্রিজিং এ্যাম্বুলেন্সের এক পাশে বসে কাঁদছেন হতভাগা পিতা জহিরুল হক ভূইয়া সহ নিকট স্বজনেরা।
নিহত মামুনের পিতা জহিরুল হক ভূইয়া
জানান,অনেক স্বপ্ন আশা নিয়ে ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর জন্যে শ্রমঘাম মাটিকরে সৌদি আরবে পারিজমিয়ে ছিলাম। স্বপ্ন পূরণ করার জন্যে ছেলেকে ভর্তিকরিয়ে ছিলাম রাজধানীর গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজে। সে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত শুক্রবার প্রথমে আমি সৌদিআরব সময় বিকেল ৪টার দিকে আমি নৌ-দূর্ঘটনার খবর পাই। দূর্ঘটনার খবরটি ফেইসবুকে শেয়ারও করি। আমার সাথে আমার স্ত্রীও সৌদি আরবে ছিলেন। তখনো জানতাম না আমাদের আদারের বাঁচাধন এই নৌকায় আছে। পরে নিকট স্বজনদের মাধ্যমে নৌ-দূর্ঘটনায় নিজসন্তান হারানোর খবরটি পাই। এসময় বার বার কান্নায় মুচ্ছাযান জহিরুল। গতকাল রাতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। আজ সকালে জানাযার আগে চাপা ক্ষোভ আর কান্নায় ভেঙ্গে পরেন জহিরুল হক ভূইয়া।
এসময় তিনি বলেন, জীবনে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ১৮ লাখ টাকা খরচ করে ছেলেকে ঢাকা রাজধানীর গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু এভাবে আমাদের আশার প্রদীপ আল্লাতালায়া নিবিয়ে দেবেন ভাবতে পারিনি। তিনি নৌ-দূর্ঘটনার জন্যে দায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান। পাশাপাশি নৌকাঘাটের সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
আরিফ বিল্লাহ মামুন এর মা পারভীন আক্তার বলেন, এমন মৃত্যু যেন কারো না হয়। আমার ছেলের মৃত্যু যেন শেষ মৃত্যু হয়। তিনি চম্পক নগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার পথে যে অরাজকতা সেটি নিয়ন্ত্রনে আনার দাবী জানান। পাশাপাশি যারা নৌ-দূর্ঘটনায় জরিত তাদেরকে গ্রেপ্তার সহ আইনের আওতায় এসে বিচারের মুখোমুখি করার দাবী জানান।
এদিকে ফ্রিজিং ভ্যানেরাখা মেডিকেল শিক্ষার্থীর মরদেহ এক নজর দেখার জন্য
গতকাল সকালে প্রতিবেশিরা বাড়ীতে ভীর করেন স্বজন সহ বন্ধু বান্ধবেরা। এসময় নিহতের সহপাঠিরা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
বন্ধু মো: রহুল আমিন সরকার, বেলায়েত হোসেন ও ইসমাইল হোসেন জানান,আমাদের বন্ধু আরিফ বিল্লাহ মামুন খুবই মেধাবী ছিল। মেডিকেল কলেজে ভর্তিপরিক্ষায় কৃতিত্বের পাশাপাশি। ক্লাশ পরিক্ষায় কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। তার অকালে চলেযাওয়া আমরা কোনো ভাবেই মানতে পারছি না। তারা বন্ধু আরিফ বিল্লাহ মামুন স্মৃতিচারণ করে তার আত্নার শান্তি কামনা করেন।
গতকাল সকালে চম্পক ঈদগাহ জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এদিকে গেরারগাঁও গ্রামের একই পরিবারের চার সদস্যকে হারিয়ে নির্বাক পরিবারে সদস্যরা। নিহত রওশনার ছেলে সেলিম মিয়া জানান, নৌ-দূর্ঘটনায় তার মা,খালা  সহ তার পরিবারের চার সদস্যকে হারিয়েছেন। বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম। তিনি জানান,এমন ঘটনার যেন পূর্নাবৃত্তি না হয় তিনি প্রশাসনের কাছে এমন নিশ্চয়তা চাচ্ছি।  আমি নিজে বাদী হয়ে ঘটনার সাথে জরিত সাত জনের নাম উল্লেখ করে বিজয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেছি। এখন পর্যন্ত পুলিশ ৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে।বাকিদেরকে ও গ্রেপ্তারের দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি ঘটনায় সাথে জরিতদের গ্রেপ্তার সহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য: গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫টায় বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরেরর দিকে আসার পথে নৌকাটি সন্ধ্যা ৬টার দিকে পত্তন ইউনিয়নের লইস্কা বিলে আসলে  বিপরিত দিক থেকে আসা অপর একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে  যাত্রীবাহী নৌকাটি ডুবে যায়। এসময় অন্তত ৫০ জন যাত্রী সাতরিয়ে তীরে উঠতে পাড়লেও নৌকাটিতে থাকা ২২ জন ডুবে মারাযায়। নিহতের মধ্যে ১৭ জন নারী ও শিশু ছিল। এ ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্য চম্পকনগরের গেরারগাঁও গ্রামের মো: সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিজয়নগর থানায় মামলা করেন। মামলায় পুলিশ নৌকার মাঝি সহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments