শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
হোমজেলাব্রাহ্মণবাড়িয়াব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দোকান নির্মাণের জন্য খাল বরাদ্দ দিচ্ছে জেলা পরিষদ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দোকান নির্মাণের জন্য খাল বরাদ্দ দিচ্ছে জেলা পরিষদ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে দোকান ঘর নির্মাণের জন্য জেলার বিজয়নগর উপজেলায় খাল বরাদ্দ দেয়ার দরখাস্ত আহবানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খালটি বরাদ্দ দিলে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষ।
এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গতকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন জেলার বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী।
আবেদনে দীপক চৌধুরী বাপ্পী উল্লেখ করেন, আখাউড়া-চান্দুরা, মির্জাপুর-হরষপুর সড়কের মির্জাপুর মৌজার ২৯০ দাগ, মির্জাপুর-হরষপুর সড়কের পাইকপাড়া মৌজার ৩৩৪ দাগ, একই সড়কের বাগদিয়ার ৩১০ দাগসহ বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জায়গা বরাদ্দের জন্য গত ২২ অক্টোবর একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যেসব দাগের কথা উল্লেখ করা আছে, সেগুলো এখনো খাল হিসেবে বিদ্যমান। এসব খাল ভরাট করে ইজারাদাররা দোকানপাট নির্মাণ করলে এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ার পাশাপাশি শত শত একর জমির সেচ কাজও বিঘœ ঘটবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে।
অভিযোগে তিনি আরো উল্লেখ করেন, উপজেলার যে সব জায়গার জন্য দরখাস্ত আহবান করা হয়েছে সেটির সামনে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু সরকারি বিধি অনুযায়ি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে মার্কেট নির্মাণে বিধি নিষেধ রয়েছে। খাল এবং জলাশয় রক্ষার জন্য আইনে সুস্পষ্ট ব্যাখা ও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকলেও এক্ষেত্রে জেলা পরিষদ সেটির তোয়াক্কা করেন নি। সরকারের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে জেলা পরিষদ এ ধরণের বেআইনি উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি আইনিভাবেও লড়ার বিষয়ে চিন্তা করছেন এলাকার মানুষ।
এদিকে ৩০ নভেম্বর দরখাস্ত দাখিলের শেষ সময় হলেও প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে এখনও অনেকের কাছ থেকে লিজ নেয়ার দরখাস্ত নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। জেলা পরিষদের কর্মচারি মোঃ আমির হোসেন অনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য পছন্দের লোকজনকে ডেকে এনে দরখাস্ত জমা নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের ভূমি বিভাগের উচ্চমান সহকারি মোঃ আমির হোসেন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রথমে তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত তারিখের পর কারো কাছ থেকে আবেদন নেয়া হয় নি। পরে আবার বলেন, অনেকে আবেগে নির্ধারিত সময়ের পর দরখাস্ত নিয়ে আসে। তাদের কয়েকজনের দরখাস্ত রেখেছি। কিন্তু এগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘ওই এলাকাটি আমার আওতাধীন। কিন্তু ভূমি লিজ দেয়ার বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেয়া হয় নি। পরে জানতে পারি যে ভূমিটি লিজ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ খাল। আর খালের পাশ ঘেঁষেই সরকারি রাস্তা। যে কারণে ওই জায়গা লিজ দিলে খাল ভরাট করে দোকান নির্মাণ করতে হবে। এতে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, আমির হোসেনে বিরুদ্ধে নানা কারণে এর আগেও একজন জেলা পরিষদ সদস্য অভিযোগ করেছেন। কিন্তু জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা নির্বাহী কেউ এ বিষয়টি আমলে নেন নি।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরণের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগ হয়ে থাকলে সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল আলম সোমবার বিকেলে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘খালের যেন ক্ষতি না হয় সেদিক খেয়াল করেই ভূমি বরাদ্দ দেয়া হবে। খালের পাশে যে খালি জায়গা আছে সেখানে দোকান করা যাবে। এতে ওই এলাকার মানুষেরই উপকার হবে। উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে এ ধরণের অভিযোগ করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments