বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
হোমজেলাব্রাহ্মণবাড়িয়াব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের হরতাল চলাকালে প্রেস ক্লাব সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় হামলা,...

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের হরতাল চলাকালে প্রেস ক্লাব সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দফায় দফায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, পাকবাহিনীকেও হার মানিয়েছে হামলাকারীরা, দিনভর জ্বলেছে আগুন, উঠেছে ধোঁয়া ॥ হাইওয়ে ফাঁড়িতে আগুন, নিহত-২ ॥ নিস্ক্রিয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

হেফাজতের ডাকা হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে হেফাজত সমর্থকরা। সরকারি অফিস,রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান,পুলিশ ফাঁড়ি,সরকারি দল আওয়ামীলীগের নেতাদের বাড়ি-বাড়ি ও অফিস,সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভাংচুর-লুটপাট চলেছে নির্বিচারে। বাদ যায়নি প্রেসক্লাবও। হেফাজত সমর্থকদের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীরাও এ ধ্বংসখেলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল রবিবার হরতাল চলাকালে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের সরকারপাড়াস্থ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভনের বাড়িতে আগুন দেয়ার মধ্য দিয়ে হেফাজত সমর্থকদের ধ্বংসলীলা শুরু হয়। সেখানে ঘর,আসবাবপত্র,বড়ভাই আইনজীবির ২০বছরের নথিপত্র এমনকি কোরান শরীফও পুড়েছে। এরপর হেফাজত সমর্থকরা সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার হেফাজত সমর্থকদের সাথে মিলে তান্ডব শুরু করে। এসময় তারা শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এলাকায় সুর স¤্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন পৌর মিলনায়তনের দরোজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গান পাউডার দিয়ে পুরো হলরুম জ্বালিয়ে দেয়। এসময় অনুষ্ঠানের জন্য আনা সাউন্ড সিস্টেম,চেয়ার-টেবিল-মঞ্চ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মতিন সাউন্ডের মালিক আবদুল মতিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন,আমার চোখের সামনেই আমার সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। আমি রক্ষা করতে পারিনি। আমার এখন পথে নামা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। পাশের পৌর ভবনের নীচতলা থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত কক্ষে কক্ষে গিয়ে আগুন দেয়া হয়। পুড়ে গেছে অফিসের সকল সামগ্রী-কাগজপত্র। নীচে রাখা পৌরসভায় কয়েকটি গাড়িও অঙ্গার হয়ে যায়। এরপরই আগুন দেয়া হয় শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে। সেখানে চলমান সরকারের উন্নয়নমেলার পুরো প্যান্ডেল,শতাধিক সরকারি অফিসের স্টল পুড়ে যায়। ভয়াবহ আগুনে এসময় এই চত্বরে থাকা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের কার্যালয় সমাজসেবা প্রকল্পের পৌর অফিসটি দাউ দাউ করা আগুনে পুড়ে যায়। এই হামলাকারীদের মিছিল থেকে সন্ত্রাসীরা শহরের হালদারপাড়াস্থ জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়েও হামলা-ভাংচুর ও আগুন দেয়। ভয়াবহ আগুনে আবারো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শহরের ঐতিহ্যবাহী সুর স¤্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা পৌর মিলনায়তন। এখানের হলরুম,সঙ্গীতের ক্লাশরুম,ওস্তাদ আলাউদ্দিন খার নামে থাকা মূল্যবান যাদুঘর। নষ্ট হয়ে ও পুড়ে ধ্বংস হয়েছে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা সাহেবের অনেক অমূল্য স্মারক। সুর স¤্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা সঙ্গীতাঙ্গনের সম্পাদক নাট্যজন মনজুরুল আলম হাউ-মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির দিকে তাকানো যাচ্ছে না। এমন বর্বরতার চিহ্ন আর সহ্য করা যাচ্ছে না। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল এর বন্ধু হিসাবে পরিচিত জেনির একটি মার্কেটের সকল দোকানপাট পুড়িয়েছে হেফাজত সমর্থকরা। ভয়াবহ ও নারকীয়ভাবে দু,বার হামলা করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়াস্থ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের বাড়ি। এরপর আগুন লাগিয়ে ঘর ও গাড়ি পোড়ানো হয় পাশ্ববর্তী বাগানবাড়িস্থ তার শ্বশুর বাড়িও। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার বলেন, সারা শহরে দিনভর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গান পাউডার ব্যবহার করে আমার বাড়িতে রুমে রুমে আগুন দেয়া হয়। এসময় প্রশাসন সহ সকলেই নির্বিকার ছিলেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। আগুন দেয়া হয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা তানভীর চৌধুরীর বাড়ির নীচতলায়। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে শহরের পুরাতন জেলরোড এলাকায় সদর উপজেলা ভূমি অফিস। সেখানে শতশত ভূমি সংক্রান্ত মূল্যবান নথি পুড়ে গেছে বলে জানান অফিসের কর্মচারীরা। একই সময়ে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় জেলা পরিষদে থাকা শিশু একাডেমীর অফিস রুম, পাঠাগার,প্রশিক্ষণ কক্ষ। এসময় প্রচুর বইপত্র,মোটর সাইকেল পুড়ে যায়। শহরের একই সময়ে তান্ডব চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমী, সরকারি গণগ্রন্থাগার,ব্যাংক এশিয়া অফিস,শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল এর বাড়ি। দুপুরের পর শহরের পাইকপাড়ায় পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীরের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করতে ব্যর্থ হয়ে তারা বাড়ির নীচে আমার বাজার নামে একটি সুপারশপ লুটে নিয়ে যায়। সরকারি গণগ্রন্থাগারে হামলার সময় মারধোর করা হয় সহকারি লাইব্রেরিয়ান সাইফুর রহমান লিমন ও মাথা ফাটানো হয় অফিস সহায়ক শাহাদাত(৪৫) কে। এছাড়া হেফাজত সমর্থকরা আশুগঞ্জে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহবায়ক আবু নাসের এর বাড়িও ভাংচুর করেছে।
গতকাল রবিবার হেফাজতে ইসলাম ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনকালে বিক্ষুব্ধ হরতালকারী স্বশস্ত্র কর্মীরা সকাল ১১টার পর থেকে শহরের হালদারপাড়াস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর গাড়িসহ ৩টি মোটর সাইকেল, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, পৌরসভা ভবন, পৌরসভা গ্যারেজের ৩টি গাড়ি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গণগ্রন্থাগার, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজার বুথে আগুন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ২দফা অগ্নিসংযোগ ও প্রেসক্লাবে দফায় দফায় হামলা করা হয়, শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত উন্নয়ন মেলার ৩২টি স্টলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এছাড়া পৌর মেয়র এর পাইকপাড়াস্থ বাসভবন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব, ব্যাংক অব এশিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, শহরের আনন্দময়ী কালীবাড়ির মন্দিরের মুর্তি, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূইয়ার নিজস্ব অফিস, রবিউল মোকতাদির চৌধুরী মহিলা কলেজ, মরহুম নেছার চৌধুরীর বাসভবন, বিজয়নগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসিমা মুকাই আলীর শহরের হালদারপাড়াস্থ বাসভবন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, দলিল লেখক সমিতি, ঠিকাদার খাইরুল আলমের বাসভবনে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে হামলার সময় প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি গুরুতর আহত হন। এছাড়া সকালে শহরের পৈরতলা এলাকায় হরতালের ছবি তুলতে গেলে আমাদের নতুন সময় পত্রিকার প্রতিনিধি আবুল হাসনাত রাফিকেও মারধর করে হরতালকারীরা। হরতালকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরাসারস্থ বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয় এবং জেলা পুলিশ লাইনে হামলার চেষ্টা চালায়। এছাড়া হামলাকারীরা মধ্যপাড়াস্থ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মাহবুবুল আলম খোকনের বাসভবন, জেলা বারের সভাপতি শফিউল আলম লিটন, জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. মনির হোসেন এর ফুলবাড়িয়াস্থ বাসভবনে, শহরের দক্ষিণ কালিবাড়ী ও মেড্ডা কালভৈরব মন্দিরে হামলার চেষ্টা চালায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল রবিবার দিনভর হেফাজত সমর্থকদের আগুন দেয়ার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। সারাদিন ধোঁয়া উঠেছে শহরজুড়ে। মনে হয়েছে জ্বলছে পুরো শহর। রবিবার পুরো শহর ছিলো কার্যত ধ্বংসের নগরী। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোথাও হেফাজত সমর্থকদের ধ্বংসলীলা থামাতে দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষ্যদর্শী জানান, এ ধরনের নেক্কার জনক হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
রেহাই পায়নি প্রেসক্লাবও ॥
হেফাজত সমর্থকদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে এবার রক্ষা পায়নি প্রেসক্লাবও। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১ টার পরই একটি মিছিল নিয়ে এসে হেফাজত সমর্থকরা প্রেসক্লাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করে। এসময় প্রেসক্লাবে ঢুকার পথে হামলা করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির উপর। এসময় তার মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার মাথায় ৬ টি সেলাই দিতে হয় বলেও জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন জানান, অতর্কিতভাবে প্রেসক্লাবে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামির ওপর আক্রমণ করেন। তার মাথায় ৬ টি সেলাই দেয়া হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হেফাজত সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন জাগো নিউজ প্রতিনিধি আবুল হাসপানাত রাফি। শহরের পীরবাড়িতে দৈনিক অন্য দিগন্ত পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মাইনুদ্দীন চিশতী ও ইন্ডিয়ান নিউজ চ্যানেল এক্সপ্রেস নিউজের ক্যামেরা পারসন আরিফুল ইসলাম বাবু বিক্ষোভকারীদের হামলার শিকার হয়েছে।
আশুগঞ্জে ট্রেনে হামলা ॥
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ডাকা হরতালে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রোববার সকালে চট্টগ্রামগামী বিরতীহীন ট্রেন সোনার বাংলায় বিক্ষোভকারীরা হামলা করেন। এসময় ইটপাটকেলের আঘাতে ট্রেনের বিভিন্ন বগির জানালা ও ইঞ্জিনের সামনের কাচ ভেঙে যায়। এসময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায় রোববার সকালে রাজধানী ঢাকা থেকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে। পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তালশহর স্টেশন এলাকা অতিক্রম করার সময় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকরা ট্রেনটি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে ট্রেনটির ইঞ্জিন ও বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ট্রেনটি উল্টো পথে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নিয়ে যাওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশনমাস্টার সোয়েব আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছেন। ফলে ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে আটকা পড়ে।
নিস্ক্রিয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ॥
দিনভর হেফাজত সমর্থকরা তান্ডব চালালেও মাত্র একস্থানে পুলিশের সাথে হেফাজত সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার সকালে শহরের পীরবাড়িতে ব্রাহ্মবাড়িয়া পুলিশ লাইনে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয় ভাংচুর করে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ঘন্টাব্যাপী পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর অংশে ও বিশ্বরোডে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এসময় কয়েকজন গুলবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলা চলাকালীন সময়ে শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যকে দেখতে পাওয়া যায়নি। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সদর থানার মসজিদ থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। পুলিশ মাদ্রাসা ছাত্রদের উদ্যেশে বলেছে তারা যেন থানায় হামলা না করে। তবে এছাতা তারা যেকোন কিছু ভাংচুর করুক। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্ক্রিয়তায় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, আজকের পরিস্থিতি আপনারা নিজেরাই দেখছেন। জনগণের জানমালের রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এসব তান্ডব চালিয়েছে জামায়াত, শিবির ও বিএনপি।
সরাইলে দুজন নিহত ॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে রোববার হেফাজতে ইসলামের হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত দুজনের একজন হলেন সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিহাতা গ্রামের আলতাব আলী ওরফে আলতু মিয়া হাদিস মিয়া ওরফে কালন মিয়া (২৩) ও সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের সুফি আলীর ছেলে আল আমীন (১২)। আহত অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার আধা ঘণ্টা পর সে মারা যায়। কুট্টাপাড়া গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদেক মিয়া ও প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক আল এমরান এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নিহত ব্যক্তির বড় ভাই মাওলানা আবদুর রহিম (৩৮)বলেন, ‘আমার ভাই পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। লাশ আমাদের বাড়িতে আছে।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রানা নুরুশামস হাসপাতালে শিশু আল আমীনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। একই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত আলী দুজনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তরুণের লাশ তাঁর স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। আর হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হরতাল–সমর্থকেরা। তাঁরা থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। হেফাজত সমর্থকদের হামলায় ওসি শাখাওয়াত হোসেন সহ ৫ জন আহত হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিছুর রহমান বলেন, ‘সরাইল উপজেলায় উত্তপ্ত অবস্থা থাকলেও মহাসড়ক ছাড়া কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হাইওয়ে থানায় হামলায় অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments