বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
হোমজাতীয়সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক শহীদুলের নাম আজো মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পায়নি

সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংবাদিক শহীদুলের নাম আজো মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পায়নি

১৯৮২-৮৭ এর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দি নিউ নেশনের সাবেক চীফ রিপোর্টার শহীদুল ইসলামের নাম আজো মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পায়নি। আজ ৩ বছর যাবৎ অসুস্হ হয়ে তিনি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের বাড়ীতে অসহায় জীবন-যাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদুল ইসলাম দশম শ্রেণীর ছাত্র এবং কালীগঞ্জ থানা পূর্ব পাকিস্হান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি ভারতে গমন করেন। ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরামপুর থেকে বাংলাদেশের ৩৮ জন তরুন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টির জন্য ” বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা দল” হিসেবে দিল্লী অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে। শহীদুল ইসলাম এ পদযাত্রা দলের অন্যতম সদস্য। ১৯৭২ সালে দিল্লীর রাজঘাটে এ পদযাত্রা শেষ হবার কথা ছিল। কিন্ত তার আগেই দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের পর লখনৌতে বিজয় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পদযাত্রা সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। এ পদযাত্রা দল অর্থ, ওষুদ, খাদ্য ও বস্ত্র সংগ্রহ করে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে প্রেরণ করতেন। মুক্তিযুদ্ধের দির্ঘ ৯ মাস ভারতে অবস্হান করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আরো অনেক কাজ করেন।
২০১০ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকা মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে উক্ত পদযাত্রা দলের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকালীন উপ- প্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার উক্ত পদযাত্রা দলের সদস্যদের মাঝে সনদপত্র বিতরন করেন। একই বছরে পদযাত্রা দলের উপনেতা কামরুল আমান ও সনৎ কুমার বিশ্বাস যৌথভাবে পদযাত্রা দলের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আবেদন করেন। উক্ত ৩৮ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছেন। অজ্ঞাত কারণে অপর ১৬ জনের নাম এখনো তালিকায় স্থান পায়নি। এদের কয়েকজন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণও করেছেন। এ ব্যাপারে শহীদুল ইসলাম বলেন ব্যাক্তিগতভাবে চেষ্টা-তদবীর করা তিনি পছন্দ করেননি। তার মাশুল হিসেবেই হয়তো তিনিসহ ১৬ জন এখনো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন নি। বাকি অন্যদের হয়তো চেষ্টা করার লোকও নেই। অথচ আমরা নিদারুন কষ্টকরে দির্ঘ ৯ মাস ভারতের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছি।
শহীদুল ইসলাম দি নিউ নেশন ছাড়াও দি নিউজ টুডে, দি বাংলাদেশ টুডে, দি ইনডিফেনডেন্টসহ বিভিন্ন ইংরেজী দৈনিকে ষ্টাফ রিপোর্টার ও সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দির্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। শেষের দিকে তিনি দি নিউ নেশনের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন। তবে দি নিউ নেশনের সাবেক চীফ রিপোর্টার হিসেবেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। শেষ দিকে উচ্চ রক্তচাপসহ মানষিক রোগে আক্রান্ত হলে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাথে থাকেন। তিনি এ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে বেসরকারি আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ছাত্রনেতা হিসেবেও তিনি চীন, থাইল্যান্ড ও পাকিস্হান সফর করেন। ২০১৮ সালে বেশি অসুস্হ হয়ে পড়লে তিনি গ্রামের বাড়ী ফিরে আসেন। তিনি এখন ডাক্তার-ওষুধের টাকাও ঠিকমতো জোঠাতে পারছেন না। শহীদুল ইসলাম বলরামপুর গ্রামের মৃত শামছুল ইসলামের বড় পুত্র।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments