শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
হোমসবদক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক

দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়েই যুক্ত হবে, সরকারী অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি, মাটি পরীক্ষণ ও ভুমি অধিগ্রহনের কাজ চলছে দীপক চৌধুরী বাপ্পী ব্রাহ্মণবাড়িয়া॥ দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক (সাব রিজিওন্যাল কানেকটিভিটি) সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্থান ঘটতে যাচ্ছে। দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার নিমিত্তে করিডোরের অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ নদীবন্দর’র সাথে আখাউড়া স্থলবন্দরকে সরাসরি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ২য় ভারতীয় নমনীয় ঋণচুক্তির আওতায় আশুগঞ্জ নদী বন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে ৪ লেন জাতীয় মহাসড়ককে উন্নীত করন প্রকল্পটি গৃহীত হয়। প্রকল্প মূল্য ৩হাজার ৫শ ৬৭কোটি ৮৫. লক্ষ টাকা (জিওবি ১৩১২০৮.০৩ লক্ষ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২২৫৫৭৬.৯৭ লক্ষ টাকা)। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্পটি ২০১৭সালের ২০জুলাই একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়। প্রাথমিক ভাবে ২০২১সালের ৩০জুন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান সাথে বাংলাদেশের নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে। উপ-আঞ্চলিক করিডোর বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতির চাকা অনেকটাই সচল হবে। বাংলাদেশের জন্য উপ আঞ্চলিক করিডোর খুবই গুরুত্বপূর্ন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খুব শীঘ্রই দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে নতুন হাইওয়ে নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পুরোপুরি ভূমি অধিগ্রহন না করায় করোনাসহ কনসালটেন্টরা সময় মত কাজ করতে না পারায় কিছুট ধীরগতিতে চলছে এই প্রকল্পের কাজ। সূত্রমতে, ভূমি অধিগ্রহন জনিত সমস্যা কেটে গেলে ও বর্ষার মওসুমের পর পরই বিভিন্ন স্থানে নতুন কার্যক্রম শুরু হবে। ভারতীয় কনসালটেন্ট ও ঠিকাদাররা সঠিক সময়ে আসতে পারায় প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ আশুগঞ্জ নদী বন্দর থেকে ৫০.৫৮কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রাথমিক কাজ এখন শুরু হয়েছে। এর অধীনে ১৬টি সেতু, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩টি আন্ডারপাস, ৩৬টি কালভার্ট এবং ১০টি ফুটওভারব্রীজ নির্মান হবে। প্রকল্পটিতে ৩টি পূর্তকাজের প্যাকেজ রয়েছে। ১ম প্যাকেজে আশুগঞ্জ নদীবন্দর হতে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ১২.২১১ কিঃ মিঃ, ২য় প্যাকেজে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) হতে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ২৭.০৫৪ কিঃমিঃ এবং ৩য় প্যাকেজে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) হতে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১.৩১৫ কিঃমিঃ মহাসড়ককে ধীর গতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলের পৃথক দুইটি লেনসহ চার লেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পে ১০৭.৫০ হেক্টর ভ’মি অধিগ্রহন রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটিতে মহাসড়ককে ৪লেন জাতীয় মহাসড়ককে উন্নীত করনের জন্য ৩টি পূর্তকাজের প্যাকেজের মধ্যে ২টি প্যাকেজের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকি ১টি প্যাকেজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। যার মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান। বর্তমানে পূর্ত কাজের দুইটি প্যাকেজের অধীনে সার্ভে কাজ, বিভিন্ন সেতুর স্থানে মাটি পরীক্ষা ও টেস্ট পাইলিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাইলের লোড টেস্ট কাজ চলছে। শীঘ্রই মূলপাইলিং কাজ শুরু হবে। আশুগঞ্জ নদী বন্দর থেকে সরাইল বিশ^রোড হয়ে আখাউড়ার ধরখার দিয়ে এ সড়কটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে গিয়ে পৌছবে। এরমধ্যেই এ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহন ও মাটি পরীক্ষনসহ প্রাথমিক সকল কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে, ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরগামী হাইওয়ে সড়কে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিতে নতুন নতুন ভবন ও স্থাপনা তৈরীর হিড়িক পড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের শুরুতেই ডাটাবেজ, ভিডিও ফুটেজ ও মানচিত্র প্রস্তুত করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সরকারি অর্থ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তব কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির আওতায় ফোরলেনের কাজটি ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যায় হবে ৩হাজার ৫শ কোটি টাকা। ২০শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। অবশিষ্ট অংশ ভারত সরকার প্রদান করবে। প্রকল্পে ২৬৫একর জমি অধিগ্রহন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬২কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও ভারতের লাইন অব ক্রিয়েট এর আওতায় ২টি প্যাকেজে এসব কাজ বাস্তবায়ন হবে। শীঘ্রই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরুর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত মুনাফার আশায় এবং সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিতে এক শ্রেনীর লোক ধরখার-আখাউড়ার হাইয়ের জন্য সম্ভাব্যস্থানে বাড়িঘর নির্মাণ করছে। স্থানীয়রা জানান, সড়কটি সোজাসোজি গেলে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার পাশাপাশি সরকারি অর্থের ব্যয় কমবে। এতে লাভবান হবে সরকার। আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের একটি সুত্র জানায়, অন্যায় ভাবে সম্ভাব্য সড়কের পাশে স্থাপনা করায় সম্প্রতি বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তারা মুচলেকা দিয়ে গেছে। সরকারি অর্থ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হাতিয়ে নিতে স্থাপনা নির্মান করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শাহরুল আমিন জানান, বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসক হায়াৎ উদ দৌলা খান বলেন, ভূমি অধিগ্রহনের জন্য প্রস্তাবকৃত স্থানের ভিডিও আগেই করা আছে। নুতন করে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষতিপূরণ কেউ পাবেন না।

মন্তব্য করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments