বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন সরকার পদ্মাসেতু নির্মান করতে পারবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছেন। আগামী বছর পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতুতে বানানো হচ্ছে। আপনারা কেউ পদ্মা সেতুতে উঠবেন না। এই সেতু ভেঙ্গে পড়বে। আপনি খালেদা জিয়া আরো কিছুদিন বেঁচে থাকুন। আপনি যেদিন পদ্মাসেতু পাড় হবেন, “আমরা সেদিন জিজ্ঞাসা করবো, “আপনি আপনার ওয়াদা রক্ষা করছেন না কেন? আমি বিএনপির নেতা-কর্মীদের বলি আপনারা আপনাদের নেত্রীর নির্দেশমতো পদ্মা সেতুতে উঠবেন না।
তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষে স্থানীয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্ত্বরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্তদিবস উপযাপন কমিটি আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাজাহান খান এমপি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃত্তিতে দেশ ভারত, পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সবাই দেশের উন্নয়ন দেখতে পেলেও দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালনা করছিলেন। বিএনপির শাসনামলে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষ অমুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে। তিনি ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। তিনি বলেন, ভাস্কর্য একটা শিল্প। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভাস্কর্য আছে। বিশেষ করে পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, মিশর, আরব-আমিরাতসহ বেশ কিছু ইসলামিক দেশেও ভাস্কর্য আছে।
তিনি আলেম সমাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, চট্টগ্রামের সাবেক সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য আছে। বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী থাকাকালে মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য ছিলো কই তখনতো আপনারা কোন কথা বলেননি।
আলেম সমাজতো কোনদিন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার চাননি। আপনারা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন না। আপনারা ধর্মকে ব্যবহার করেন নিজেদের স্বার্থে। আপনারা ধর্মকে ব্যবহার করেন মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আপনারা ইসলামকে কখনো ইসলামের স্বার্থে ব্যবহার করেননি। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে বিএনপি অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করে। বাসে পেট্টোল বোমা মেরে চালক ও যাত্রীদের হত্যা করেছে। আলেম সমাজতো এসবের নিন্দা কোন দিন করেনি। তিনি বলেন, জয় বাংলা আওয়ামী লীগের শ্লোগান নয়, জয় বাংলাকে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বে-সামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বলেন, ভাস্কর্য সারা বিশ্বের সংস্কৃতির অঙ্গ। আজকে আলেমরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, সকল প্রকার ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। এই ভাস্কর্য হচ্ছে বাঙ্গালী বা পুরো বিশ্বের সংস্কৃতির অঙ্গ। এটাকে ধ্বংস করা গেলে মানব ইতিহাসে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে ধ্বংস করা যাবে। মনগড়া ইসলামকে দিয়ে তারা এটাকে সামনে নিয়ে আসে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খাঁন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ও পৌর সভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির। বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছেল সিদ্দিকী। বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও মিলন মেলায় জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এসে যোগ দেন।